স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (PDF Download)
Click Here to Download PDF: https://rajshahimirror.xyz/wp-content/uploads/2024/10/স্বাধীন-বাংলাদেশের-অভ্যুদয়ের-ইতিহাস-Educationblog24.Com-.pdf
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বর্ণনায় একটি দীর্ঘ সংগ্রামের ফলাফল এবং বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের স্ফুরণ উল্লেখ করা হয়। এই ইতিহাসের কেন্দ্রে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রতিরোধ এবং এর শেষ পরিণতি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ।
প্রেক্ষাপট: ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়—ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তান ছিল দুটি ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত—পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তান। কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোয় পূর্ব পাকিস্তানকে সবসময় উপেক্ষা করা হয়েছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য বাঙালি জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়ে তোলে।
মূল কারণসমূহ:
১. ভাষা আন্দোলন (১৯৪৮-১৯৫২): পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশি দমন-পীড়নে ছাত্রদের আত্মদান ভাষা আন্দোলনকে তীব্র করে তোলে এবং এটি পরবর্তীকালে বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূলে পরিণত হয়।
২. রাজনৈতিক অসাম্য: পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে আসছিল। রাজনৈতিক ক্ষমতা সবসময় পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল।
৩. অর্থনৈতিক বৈষম্য: পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে অবহেলিত ছিল। পাকিস্তানের মোট রপ্তানি আয়ের বড় অংশ পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসলেও, পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে তেমন অর্থ ব্যয় করা হয়নি।
৪. ছয় দফা আন্দোলন (১৯৬৬): শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে, যা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি। এটি ছিল পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দাবির রূপ।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন ও তার ফলাফল:
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিশাল বিজয় অর্জন করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ আসনে বিজয়ী হয়। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেখ মুজিবকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। এটি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটায়।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনা (১৯৭১):
২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা ও দেশের অন্যান্য স্থানে বাঙালিদের উপর নির্মম গণহত্যা শুরু করে, যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। এর পরেই ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ধাপসমূহ:
১. প্রতিরোধ যুদ্ধ: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। ২. গেরিলা যুদ্ধ: মুক্তিবাহিনী গেরিলা কৌশলে যুদ্ধ করে। ৩. আন্তর্জাতিক সমর্থন: ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন দেয়। ৪. ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য:
স্বাধীনতার সংগ্রাম কেবল রাজনৈতিক মুক্তির জন্য নয়, এটি ছিল বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন।