“তোমার পায়ে রক্ত কেন?”

১০ জুলাই:
আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হয়েছে ভাইবা দিয়ে সবাই একসাথে ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ কানে ভেসে আসলো “আমাদের দাবি আমাদের দাবি মানতে হবে মানতে হবে ”। আমার মনে পড়লো অনলাইনে দেখেছি ঢাকা ইউনিভার্সিটি পহেলা জুলাই থেকে কোটা প্রথার সংস্কারের জন্য ৯ দফা দাবি নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে এবং ১০ জুলাই রাজশাহী ইউনিভার্সিটি সকল স্কুল কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিকে আহ্বান করেছে তাদের সাথে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম আমার সহপাঠীদেরকে বললাম চলো আমরাও এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। সবাই স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিল তারা এই মুহূর্তে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আমার পরীক্ষা শেষ কিছুদিন ছুটি থাকবে তাই আমি সবার থেকে বিদায় নিলাম। আমি ধীরে ধীরে হেঁটে আমার ইউনিভার্সিটির গেটে দাঁড়ালাম যখন মিছিলটি আমার ইউনিভার্সিটি গেটের সামনে আসলো আমি তাদের সাথে যুক্ত হলাম। মনের মধ্যে একটু একটু ভয় থাকলেও আমার সাহস তার থেকে বেশি প্রশ্রয় দিচ্ছিল। আমার কোন সহপাঠী নেই সব অপরিচিত মুখ আমি জানি আমার কিছু হলে এরা আমাকে ফেলে আসবে না। মিছিলটি ১৪ পাই চার রাস্তার মোড়ে যাওয়ার পর সেখানে রাস্তা ব্লক করে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। রোগী, অ্যাম্বুলেন্স এবং সাংবাদিক এর গাড়ি ব্যতীত সকল ধরনের গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। আমি তাদের সাথে বিকাল ৩:০০ টা পর্যন্ত অবস্থান করে বাসায় চলে আসি অফিসে যেতে হবে আমি একটি আইটি ফার্মে পার্ট টাইম জব করি।
১৪ জুলাই:
রাষ্ট্রপতি বরাবর এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি স্থানীয় জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারক লিপি প্রদান করে এবং পদযাত্রা পালন করে। আন্দোলনকারীদের ওপর এক প্রকার রাগ ঝেড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে আখ্যায়িত করেন। সেইদিন রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল গুলো থেকে বের হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ পালন করে।
“তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার”
“কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার”
“চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার”
স্লোগানে উত্তাল হয়ে পড়ে ঢাবি রাবি এবং জাবি সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
১৫ জুলাই:
প্রধানমন্ত্রীর অপমানজনক বক্তব্য “রাজাকারের নাতি পুতিরা পাবে” প্রত্যাহার এবং কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ পালন করে। এই দিন পুলিশ এবং ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপরে ব্যাপক হামলা চালায় এতে ৩০০ এর বেশি ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়। আমি রাজশাহী ইউনিভার্সিটির ভিতরে প্যারিস রোডের রুয়েট, রাজশাহী এবং বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটির সাথে মিছিলে অংশগ্রহণ করি।
১৬ জুলাই:
ঢাকা চট্টগ্রাম রংপুরে আন্দোলনকারীদের ওপর স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ যুবলীগ এবং পুলিশ বাহিনী ব্যাপক হামলা চালায় এতে ৬ জনের মৃত্যু হয় । রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ ভাইকে পুলিশ সরাসরি গুলি করে হত্যা করে। আবু সাঈদ ভাই পুলিশের সামনে বুক টান করে দাঁড়ালে তাকে পরপর কয়েকটা গুলি করা হয়। কিছুক্ষণ পরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিওটি দেশের প্রতিটা মানুষের মনে প্রতিবাদের ঝাড়তলে। ঢাকা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছাত্রলীগের হল এবং রুম দখল করে। আন্দোলন আরো তীব্র রূপ ধারণ করে। সরকার সকল স্কুল কলেজ ও ইউনিভার্সিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি রুম থেকে দুটি পিস্তল সহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী ঢাকা বাইপাস সরক অবরোধ করে বিক্ষোভ পালন করে। রাতে আনুমানিক ১০:০০ টার সময় অফিস করে বাসায় ফেরার পথে। ছাত্রলীগ কর্মীরা রাজশাহী সিটির মেয়র লিটন এর নেতৃত্বে সাহেব বাজার, জিরো পয়েন্টে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের ওপরে আক্রমণ করে।
১৭ জুলাই:
ঢাকা রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত আন্দোলনকারীদের গায়েবানা জানাজা নামাজ পড়েন। বিভিন্ন জায়গায় গায়েবানা জানাজার নামাজ পড়তেও পুলিশ বাধা প্রদান করেন এবং শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ চালায়। গায়েবানা জানাজার নামাজ শেষে কফিন মিছিল নিয়ে বের হলে ব্যাপক রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ার সেল এর মাধ্যমে ছাত্রদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ইউজিসি সকল ছাত্র-ছাত্রীকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। বাধ্য হয়ে হল ত্যাগ করেন ঢাকা, রোকেয়া এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীরা । রংপুরে আবু সাঈদ ভাইয়ের জানাজা সম্পন্ন হয় । ওবায়দুল কাদের তার নেতাকর্মীদেরকে উস্কানি দিয়ে বলেন :
”প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত থাকতে হবে আন্দোলনকারীদেরকে প্রতিহত করার জন্য”
এর প্রতিবাদে পরের দিনের কর্মসূচি হিসেবে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করা হয়। শেখ হাসিনা সন্ধ্যায় একটি প্রেস ব্রিফিং করে সকল আন্দোলনকারীকে সংলাপের আহ্বান জানায়।
১৮ জুলাই:
১৮ জুলাই শাটডাউনের প্রথম দিনে চাকরিজীবী, কৃষক, ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, রিক্সাওয়ালা, এবং ব্রাক ইউনিভার্সিটির সহ অন্যান্য বাংলাদেশের সকল ইউনিভার্সিটি অংশগ্রহণ করে । স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে। সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন পালন করে আন্দোলনকারীরা। দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের উপরে হামলা করা হয় নিক্ষেপ করা হয় টিয়ার সেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, ও গুলি। ঢাকা শহরের বাসা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ছাত্রদেরকে তুলে আনে। বিভিন্ন বাহিনী মিলে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায় এতে ১৯ জেলায় প্রায় ২৯ জন নিহত হয়। বিটিভি মেট্রোরেল সহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় দূরবৃত্তকারীরা আগুন দেয় আন্দোলনকারীদেরকে প্রশ্ন বৃদ্ধ করার জন্য। ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেওয়া হয়। ইন্টারনেট শাটডাউন করে ঢাকা শহরে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালানো হয় (এই পরিবেশে ২৫শে মার্চ কালো রাতের কথা মনে পড়ে যায় )। নিরস্ত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলির জেরে ফুসে উঠে পুরো দেশ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সংহতি জানায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠন গুলো।
১৯ শে জুলাই:
বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় কতিপয় দূরবৃত্তকারীরা অগ্নি সংযোগ করে নরসিংদী জেল থেকে বিপুল সংখ্যক কয়েদি পালায়ন করে এবং ব্যাপক অস্ত্রশস্ত্র লুট হয়। সেনাবাহিনী পুলিশ আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন বাহিনীর হত্যাকাণ্ডে প্রায় ৬৬ জনের প্রাণ হানীর খবর পাওয়া যায়। মধ্যরাত থেকে ১৪৪ ধারা অতএব কারফিউ জারি করা হয়। এই দিনেও ইন্টারনেট শাটডাউন বহাল ছিল। ১৪৪ ধারা কে উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। এই দিনে হেলিকপ্টার থেকেও গুলি বর্ষণ করা হয়।
২০ শে জুলাই:
সমন্বয়কদের তুলে ডিবি পুলিশ কার্যালয় নিয়ে যাওয়া হয়। এই দিন কারফিউ বহাল রাখে প্রায় ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। দুদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিরোধী দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারি তথ্যমতে ১৪৬ জন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। অন্যান্য তথ্য মতে এর সংখ্যা আরো কয়েকগুণ।
২১ জুলাই:
হাইকোর্ট কোঠা নির্ধারণ করে ৭ শতাংশ সেদিনও কারফিউ অব্যাহত থাকে। বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে আরো ৭জনের মৃত্যু হয়। সকল বাহিনীর প্রধানরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন। আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালানোই ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
২২ জুলাই :
এই দিন সংঘর্ষে আরো ৬ জনের মৃত্যু হয়। নিহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে হুঁশিয়ারি দেন এবং সেনাবাহিনী প্রধান ওয়ার্কারুজ্জামান সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার আশাবাদী বলে জানান।
২৩ জুলাই:
কোটা সংস্কার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কারফিউ এর মধ্যে সমন্বয়কদের গ্রেফতার বিরোধী দলীয় জোট দমনে সরকার ধর পাকর শুরু করে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আইটি শিল্প ও গার্মেন্টস মালিকদের প্রতিবাদ আমদানি রপ্তানি অস্বাভাবিক হারে কমতে থাকে।
২৪ জুলাই:
কারফিউ কিছুটা শিথিল করা হয় এই দিন। আংশিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস গুলো চালু করা হয়।

২৫, ২৬, ২৭ জুলাই:
আন্দোলনকারীদেরকে গণ গ্রেফতার করা হয়। সমন্বয়কদের তুলে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ১৭০০ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। ইন্টারনেট সচল থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়া গুলো বন্ধ থাকে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন গণহত্যা এবং নরকীয় ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পায়।
২৮ জুলাই:
সরকার থেকে প্রথমবারের মতো ঘোষণা দেওয়া হয় যে এই পর্যন্ত মৃত্যের সংখ্যা মাত্র ১৪৭ জন। যার প্রকৃত সংখ্যা ছিল অনেক বেশি বিভিন্ন সংস্থার মতে। কয়েকদিনের সহিংসতা হানাহানিতে পুলিশের ২০০ এর অধিক মামলায় প্রায় 2 লাখের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করে। ডিবি প্রধান হারুন-উর রশিদ ছয় সমন্বয়ককে দিয়ে আন্দোলন থামানোর জন্য লিখিত পত্র পাঠ করান।
২৯, ৩০, ৩১ জুলাই:
বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা হয় আন্দোলনকারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয় হাইকোর্ট ৬য় সমন্বয়কে নিয়ে ডিবি হারুনের খাবার খাওয়া কে তিরস্কার করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিভাবক এই গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। ৩১ জুলাই সরকার থেকে শোক দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে।
১ ও ২ আগষ্ট:
সরকার জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে গ্যাজেট প্রকাশ করে। বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, ছাত্র, শিক্ষক, সংগঠন, চাকরিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, এবং রিকশাচালক ছাত্রদের বুকে গুলি চালানো এবং গণহত্যার প্রতিবাদে প্রতিবাদ মিছিল ,বিক্ষোভ, ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন এর সাথে যুক্ত হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে মার্চ ফর জাস্টিস, অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৬য় সমন্বয়ক বলেন তাদেরকে অস্ত্রের মুখে জোর করে লিখিত পত্র পাঠ করানো হয়েছে।
৩ আগষ্ট:
সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকারুজ্জামান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলন নিয়ে সামরিক কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া কি সেটা জানা। তরুণ কর্মকর্তারা সাধারণ জনগণের উপর গুলি না করার পক্ষে কথা বলেন। সেই বৈঠকে সেনাপ্রধান সংগীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর দুটি গানের দুটি লাইন তুলে ধরেন।
“প্রেমে আমি পড়িনি প্রেম আমার উপরে পড়েছে”
” আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেবো আকাশে”
তখন সব সেনা কর্মকর্তারা বুঝে গেলেন যে তিনি এই দুটি লাইনের মাধ্যমে অনেক বড় কিছু বুঝাতে চেয়েছেন। সেনাবাহিনীর প্রধান আন্দোলনে গুলি চালানোর জন্য সকল কর্মকর্তাকে নিষিদ্ধ করেন। সেনাবাহিনী বিক্ষোভ কারীদের উপর গুলি করবে না এই সিদ্ধান্তে শেখ হাসিনা খুশি হতে পারেনি। রাজশাহী সহ সারাদেশে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি স্কুল কলেজে সংঘর্ষ হয়। বিভিন্ন জেলায় ছাত্রলীগ এবং পুলিশ বাহিনী আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় তিনজন আন্দোলনকারী নিহত হন।
৪ আগষ্ট:
দিনটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নরকীয় দিন। রাওয়া ক্লাবে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি একযোগে সংহতি প্রকাশ করেন। এই সিদ্ধান্তটি জনগণ এবং সেনা কর্মকর্তাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে এসেছিল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এক দফা দাবি ঘোষণা করে। শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদেরকে বলেন আলোচনার দরজা তাদের জন্য সব সময় খোলা আছে তাদের কি কি দাবি এখনো অপরিপূর্ণ আছে সেটা তিনি জানতে চায় এবং সাধ্য অনুযায়ী পূরণ করতে চায়। এই দিনে পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষে প্রায় ১০৪ জন নিহত হবার খবর পাওয়া যায়। বিভিন্ন সংস্থা থেকে তা আরো বেশি বলে জানানো হয়। সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ নিহত হয় এবং পিজি হাসপাতালে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। আন্দোলনকারীরা সকল জেলা থেকে সকল ছাত্রদের ঢাকায় জড়ো হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। নাশকতা কারীদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টার পর কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়ন করা হয় এবং মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ শেষে এই ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠী, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, ছাত্র, শিক্ষক, সংগঠন, চাকরিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, এবং রিকশাচালক এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। বেলা প্রায় ১১:00 টার দিকে আমরা তালাইমারি থেকে মিছিল নিয়ে ভদ্রা চত্বরে কিছুক্ষণ অবস্থান করে আবার। তালাইমারিতে এসে বিক্ষোভ মিছিলটিকে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এখন পর্যন্ত আমার ইউনিভার্সিটি থেকে আন্দোলনের পক্ষে কোন বিবৃতি বা কোন উক্তি প্রকাশ করা হয়নি। বারবার স্যারদেরকে অনুরোধ করা হলেও স্যাররা বিবৃতি অথবা সংহতি প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। কিন্তু আমাদের ইউনিভার্সিটির বেশিরভাগ স্টুডেন্ট নিজেদের ব্যানার বাদে অন্যান্য ইউনিভার্সিটির সাথে আন্দোলনে যোগদান করছে। আমরা কয়েকজন মিলে একটা সিদ্ধান্তে আসি যে আমরা ৫ তারিখ সকালে আমাদের ইউনিভার্সিটির নিজেস্ব ব্যানার এ আমরা রাজশাহী ইউনিভার্সিটি এবং রুয়েট এর সাথে অংশগ্রহণ করব। আমরা কয়েকজন মিলে আমাদের ইউনিভার্সিটি গ্রুপে কথা বলা শুরু করি। অনেকেই এইটার প্রতি সহমত পোষণ করে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ৬ আগষ্ট লংমার্চ টু ঢাকা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৫ আগষ্ট করে। এত এতো লাশের ছবি এত মানুষ আহত এত রক্ত। কোন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা। বাসায় আম্মুকে ফোন দিয়ে আম্মুর সাথে কথা বললাম। আম্মুকে শুধু জানালাম আমি আগামীকালকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছি। আম্মুর কথা শুনতে আমি নারাজ বাধ্য হয়ে আম্মু ছোট বোনকে দিয়ে আমার সাথে কথা বলালেন। তার বয়স প্রায় 7 সে আমাকে বলছে ভাইয়া তুমি আন্দোলনে যাইও না পাশে থেকে মা শিখিয়ে দিচ্ছেন। আমার বউকে ফোন দিলাম আমি ঢাকা যেতে চাই। তারা মানতে নারাজ আমাকে এতটুকু অনুমতি দিল যে তুমি রাজশাহীতে থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করো। আমি অতিরিক্ত কথা না বলে ফোন কেটে দিলাম।
রাত ১টার সময় আমি আমার ইউনিভার্সিটির সকল মেম্বারদের একটা গ্রুপে। একটা মেসেজ দিলাম:
(আমি আবারো বলছি আমাদের ইউনিভার্সিটির সকল ভিসি প্রক্টর এবং শিক্ষকদেরকে খান বাহাদুর আহসানুল্লাহ সমাজ দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তার আদর্শের সাথে আমাদের ইউনিভার্সিটির মিল না থাকায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কিছু সময় কিছু পরিবেশ এবং শিক্ষা, প্রতিষ্ঠান দিতে পারে না নিজে থেকে নিতে হয়। আমি সকলের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলতে চাই দেশ আমার দেশের মানুষগুলো আমাদের আমরা আগামীকাল সকাল থেকে দেশকে দেশের মানুষকে স্বৈরাচার থেকে মুক্ত করতে। যার যার অবস্থান থেকে সচেতন থাকবো। আশেপাশের মুক্তিকামী যেকোনো ব্যানারে বা মিছিলে অংশ করব। যে যা পারি তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকবো। আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের সকল অপচেষ্টাকে একসাথে প্রতিহত করব। মনে রাখতে হবে কালকের মত দিন আর কোনদিন আসবে না। ”স্বৈরাচার পতন করো বাংলাদেশ স্বাধীন করো”)

৫ আগস্ট :
সকাল ভোরে উঠে রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম কাজলা ইউনিভার্সিটি গেটে। ইউনিভার্সিটির সকল গেটে ব্যাপক পরিমাণ পুলিশ এবং আনসার সদস্য মতায়েন করা আছে। তারা কাউকে ইউনিভার্সিটির সামনে অবস্থান করতে দিচ্ছিল না। কোনো এক মাধ্যমে খবর পেলাম সবাই রুয়েট এর সামনে জড়ো হয়েছে। আমিও তাদের সাথে অংশগ্রহণ করলাম। জানা যায় আওয়ামী লীগ এর সন্ত্রাসী বাহিনী তারা বাজার জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছে। এই দিন তালাই মাড়িতে জড়ো হয়েছিল সাধারণ জনগণ, ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক, ডাক্তার, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স, বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা, পুলিশ এবং ছাত্রলীগ ব্যতীত প্রায় সকল ধরনের মানুষ। আমরা তালাইমারিতে কিছুক্ষণ অবস্থান করে প্রায় ১১:৩০ টার দিকে বাজারের দিকে রওনা হই। এত বড় মিছিল আমার জীবনে আমি কোনদিন দেখিনি। পুরো শহরে এমন ভয়ঙ্কর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল যেন পুরো শহর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা বাজারের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এবং রাজশাহী ইউনিভার্সিটির গেট থেকে পুলিশ ধীরে ধীরে তালাইমারির এদিকে আসছে সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ার সেল মারতে মারতে।

আমরা মিছিলটি নিয়ে আলু পট্টিতে পৌঁছালে সেখানে ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগ যুবলীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশ ব্যাপক পরিমাণে টিয়ার সেল, রাবার বুলেট, ককটেল এবং গুলি চালায়। নিরস্ত্র ছাত্ররা ধীরে ধীরে পিছনে আসতে শুরু করে। হঠাৎ করেই এক ভাইয়ের পায়ে গুলি লাগে। টিয়ার সেল ধোঁয়ায় চোখ মুখ জ্বলছিল ভালো করে বুঝতেও পারছিনা। সেই ভাইকে একটা অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়া হলো। আমাদের পিছনে অনেক ছাত্র-ছাত্রী। আমরা যদি একেবারে সরে যাই তাহলে আরো বেশি নিহতের ঘটনা ঘটবে। মেয়েদেরকে ধীরে ধীরে নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। আমরা সামনে ইট পাটকেল ছুড়ে তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ করেই আমার পা অবশ হয়ে যেতে লাগলো পা নাড়াচাড়া করতে একটু ব্যথা অনুভব করছিলাম। তখন আমি একটা ট্রাউজার পড়েছিলাম টাউজারের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার ট্রাউজার ছিড়ে গেছে। আমার ট্রাউজার চিরে একটি গুলি মাংস নিয়ে চলে গেছে। কোন রকমে দৌড়ে একটি নিরাপদ স্থানে বসলাম। এক ভাই তার কপালের জাতীয় পতাকা দিয়ে আমাকে আমার পাটা বেঁধে দিল। আওয়ামী লীগ বাহিনী ধীরে ধীরে আমাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এবং আমরা পিছু হটছিলাম। এক পর্যায়ে তারা যখন কাছাকাছি চলে আসে আমাকে একজন ধরে একটি প্রতিষ্ঠানে ঢুকানোর চেষ্টা করে তারা কোন ভাবেই দরজাটা খুলেনি। 7
দুইটি ভাই আমাকে তাদের সাথে বাইকে করে। তালাইমারির দিকে নিয়ে আসে সিদ্ধান্ত নেয় তালাইমারি দিয়ে ভদ্রা হয়ে মেডিকেলে যাবে। কিন্তু তালাইমারিতে পুলিশ অবস্থান করে এবং ব্যাপক পরিমাণে টিয়ার সেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড এর কারণে এইদিকে আসতে পারিনি। আমাকে নিয়ে চলে যাওয়া হলো জাহাজ ঘাট। সবার মনে আতঙ্ক সবাই তাকিয়ে আছে। প্রথমে একজন ডাক্তারকে বাড়ি থেকে ডেকে তার চেম্বার খোলা হলো। ডাক্তার খুজে পচ্ছিলাম না। যখন তিনি যানতে পারে আমি মিছিলে গুলি বিদ্ধ। নিষেধ করে দেন উনি পারবেন না এই কাজটি করতে প্রচন্ড ব্যথায় ছটফট করছি । ঐখানে উপস্তিত সকলেই বলছিল আমাকে দ্রুত মেডিকেলে নিয়ে যেতে। কিন্তু চারিদিকের অবস্থা এতটাই ভয়ানক ছিল যে কোনো রকমের মেডিকেলের দিকে যাওয়া সম্ভব ছিল না। পা থেকে রক্ত ঝরছিল সবার মনের মধ্যেই ভয় কাজ করছিল।
তারপর কোনো না কোনো ভাবেই ইসাহাক আলী নামে এক ভাই তার সাথে দেখা হলো। পায়ের ছেঁড়াও অনেক বেশি যার কারণে উনি করতে চাচ্ছিলেন না। তাকে অনেক অনুরোধ করার পর রাজি হলো এবং তিনি এই কাজটি করতে চাইলেন। যারা আমাকে বাইক দিয়ে নিয়ে এসেছে তারা আমাকে আরেকজনের দায়িত্বে হস্তান্তর করে ওইখান থেকে চলে গেল। প্রথম যে চেম্বারে ঢুকেছিলাম সেখান থেকে বের হয়ে ইসাহাক আলী ভাইয়ের বাসায় গেলাম। তার মধ্যেও ভয় কাজ করছিল যদি এই কাজ করলে তাকে কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সেই সময়টায় ভয় পাওয়ার একটাই কারণ তখনও আমরা জানি আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন সিনিয়র নার্স হিসেবে।
তিনি ফাস্ট এইড কিডস এর মাধ্যমে আমার কাজটি সম্পন্ন করলেন। কাজ সম্পূর্ণ হলে তাকে বিল দিতে চাইলেও তিনি না করলেন। বাড়িতে হলেও সেলাইটি খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। যে ভাইয়ের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়। সে আমাকে আমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায়।
আমাকে অবস করে শেলাই করার কারণে তখন ব্যথা বুঝতে পারছিলাম না। তখন বাজে প্রায় ১টা ফনের নেট বন্ধ কোনো খবর জানতে পারছিলাম না। শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছলাম এমন সময় বড় ভাই বলেন জাইদুল শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালাইছে। এই কথাটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বড় ভাই আমাকে বলল ইন্টারনেট আইছে তুই অনলাইনে দেখ। সে আমাকে messenger এর মাধ্যমে ভিডিওটি শেয়ার করলে আমি সেই ভিডিওটি দেখে মনে মনে এত আনন্দ অনুভব করছিলাম যে আমার ব্যথা অনুভব হচ্ছিল না। তখন মনে হচ্ছিল এত বছরের একটা স্বৈরাচার সরকারের সাম্রাজ্য আমার রক্তের বিনিময়ে ভেঙে দিলাম আমি গর্বিত।
তখনই আবার মন খারাপ হচ্ছিল তাদের কথা ভেবে যারা। এটার জন্য জীবন দিয়েছে তারাই এটার আনন্দ উপভোগ করতে পারছে না। যারা জীবন দিয়েছে, পুঙ্গু হয়ে গেছে, দৃষ্টিহীন এবং হসপিটালের বেডে শুয়ে চিৎকার করছে যারা তাদেরই বা কি লাভ। এটাই মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা। ফোনে সব খবর দেখছিলাম অনেকেই ফোন দিয়ে খোজ নিচ্ছিলো। আমাকে একজন ফোন দিয়ে বলল এত উৎসাহিত হয়ে সামনে যাওয়ার কোন দরকার ছিল। তাকে আমি বলে দিলাম: “আমি অথবা আমরা যদি আজকে সামনে না যেতাম তাহলে হয়তোবা এর থেকেও বেশি মানুষ মারা যেত। গুলিটি হয়তোবা আমার পায়ে লেগেছে। এটা আমার চোখে বুকে, অথবা পেটেও লাগতে পারতো। আমার মৃত্যু হতে পারতো। আমি জানি আপনি দেশ প্রেম কি সেটা বোঝেন না।”
আমি সবাইকে ফোনদিয়ে সবার অনুভুতি জানার চেষ্টা করছি। আমার আম্মু আমাকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু তার ফোন রিসিভ করছি না। তাকে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না কারণ গ্রামের মানুষ অল্পতেই কান্নাকাটি শুরু করে।
সেই সময়টা পার হয়ে রাত হলো জ্বর চলে আসলো বিছানায় ছটফট করছিলাম । রাতে অনেক ব্যথা জাগলো পাশে কেউ নাই এত পরিমানে ব্যথা জাগলো নিজেকে গালি দিতে শুরু করলাম। এভাবেই ঘুমহীন কাটলো সারা রাত।
সকালে উঠে বাসায় গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম। বাসায় যাওয়ার পরে অনেক অসুস্থ হয়ে পরলাম। কাছেও টাকা নাই যে ডাক্তার দেখাব। এক বন্ধুর নিকট থেকে টাকা নিয়ে ডাক্তার দেখাইলাম ভীষণ অসুস্থতার মাঝেই কাটছিলো সময়। আমার খরচ আমাকেই চালাতে হয় ভাইয়েরাও হেল্প করে। আমার পক্ষে আর খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিলনা। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কিছু কাজ করি এমনিতে চলে যায়। করো কাছে হেল্প চাইব সেটাও পারছিলাম না। আবার রাজশাহী চলে আসি তখনও আমি অসুস্থ।
আমার ইউনিভার্সিটি সকলেও জনলেও ৩ জন ছ্যার এবং মেডাম ব্যতিত কেউ খোজ নিল না। আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে আমি শুধু আহত হয়েছিলাম।
রাজশাহী আসার পরে ইউভার্সিটি থেকে সকলে দেখতে আসলেন। মেডিকেলে গেলাম ভালো চিকিৎসা করানোর জন্য আমাকে আউটডোরে যেতে বলেন। লাঠি ভরদিয়ে আউটডোরে গেলাম আহতদের স্পেশাল টিম আছে নাকি কেউ জানে না। আউটডোরে একজন ডাক্তারকে দেখালাম চলে আসলাম ঔষধ খাই ভালো হয় না।
GovtInfo থেকে মেসেজ আসলো “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সময় আহত/নিহত ব্যক্তির তথ্য এবং সুচিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য বাতায়ন- ১৬২৬৩, ০১৭৫৯১১৪৪৮৮ এবং ০১৭৬৯৯৫৪১৯২ নাম্বারে যোগাযোগ করুন- এমআইএস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর”
ফোন দিলাম কে ধরলো জানি না। সব কিছু বিস্তারিত বললাম পরে আমাকে বলা হলো আপনি মেডিকেলে জান আমাদের একটা স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। আমি বার বার জিজ্ঞেস করলাম আউটডোরে যাবো নাকি মেডিকেল এ বলতে পারেনা। আমাকে বলা হলে যায়া জিজ্ঞেস করলেই পাবেন। প্রথমে আউটডোরে গেলাম হেল্প ডেস্কের কোনো মানুষ আসে নাই তখন বাজে ৮টা ৩০মি:। সিরিয়লে দারলাম মনে হয়ে কাউন্টারে বললে আমাকে ঐ স্পেশাল টিকিট দিবে।
তখনও আমি ভালো করে হাটতে পারিনা। ঐখানেও পাইলাম না হেল্প ডেস্কে মানুষ আসার পর জিজ্ঞেস করলাম যারা আন্দোলনে আহত হয়েছিলো তাদের জন্য বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে সেটা কোথায় তিনিও জানেন না। অনুরোধ করলাম একটু খোঁজ নিয়ে দিলে খুব ভালো হতো অনেক ঘুরাঘুরি করলাম পেলাম না। তারপর তিনি একজনকে ফোন দিয়ে জানলেন যে মেডিকেলের কেবিনে বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। আবার হেটে গেলাম মেডিকেল এর ইমারজেন্সি গেটে ঢুকতে দিচ্ছিলনা গেটপাশ না নিয়ে ঢুকতে দিচ্ছেনা অনেক রিকুয়েষ্ট করে ঢুকলাম।
কেবিনে গেলাম ডাক্তার আসেনাই প্রায় ১:৩০ মিমিট পরে ডাক্তার আসলেন উনাকে দেখালাম বললাম অনকদিন ধরে এখনো ভালো হচ্ছেনা। উনি বললেন ঔষুধ খাও ঠিক হয়ে যাবে বলে চলে গেলো। ব্যবহারটা এমন ছিল যে নিজেকে তুচ্ছ মনে হচ্ছিল পরে চলে আসলাম। মেডিকেলের বাহিরে এসে যত কাগজ ছিল সব ছিড়ে ফেললাম। নিজেই ইউটিউব দেখে চিকিৎসা নিয়েছি। অথচ আমাকে বালা হয়েছিল GovtInfo থেকে আমি এইখানে গেলে ফ্রী ঔষধ এবং চিকিৎসা দুইটাই পাবো।

Share Article:

MD. JAIDUL ISLAM BHUIYAN

Writer & Blogger

Considered an invitation do introduced sufficient understood instrument it. Of decisively friendship in as collecting at. No affixed be husband ye females brother garrets proceed. Least child who seven happy yet balls young. Discovery sweetness principle discourse shameless bed one excellent. Sentiments of surrounded friendship dispatched connection is he. Me or produce besides hastily up as pleased. 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Jaidul Islam

Jaidul Islam CEO of Rajshahi Mirror

Jaidul Islam

Content Creator

Endeavor bachelor but add eat pleasure doubtful sociable. Age forming covered you entered the examine. Blessing scarcely confined her contempt wondered shy.

Recent Posts

  • All Post
  • Accounting
  • Bangladesh
  • BBA
  • Commercial Law
  • Education
  • Management
  • Place
  • Politics
  • Rajshahi
  • Social Media
  • Sports
  • Tips
  • Uncategorized

Explore Rajshahi City

Questions explained agreeable preferred strangers too him her son. Set put shyness offices his females him distant.

Join Rajshahi Mirror!

Sign up for a Newsletter.

You have been successfully Subscribed! Ops! Something went wrong, please try again.
Edit Template

About

Categories

Recent Post

  • All Post
  • Accounting
  • Bangladesh
  • BBA
  • Commercial Law
  • Education
  • Management
  • Place
  • Politics
  • Rajshahi
  • Social Media
  • Sports
  • Tips
  • Uncategorized

All Rights Reserved to Rajshahi Mirror

Designed & Developed by M.S. Arefin